ঢাকা,শুক্রবার, ৩ মে ২০২৪

বান্দরবান-রুমা: ৪৩ কি.মি. সড়কের ৩৭ বেইলি ব্রিজই ঝুঁকিপূর্ণ

বান্দরবান প্রতিনিধি :: বান্দরবান-রুমা, ৪৩ কিলোমিটার  সড়কে বেইলি ব্রিজ রয়েছে ৪৩টি। এই ব্রিজগুলোর মধ্যে ৩৭টিই ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে অনেক আগেই।

পর্যটনের অপার সম্ভাবনায়ময় শঙ্খ তীরের রুমা উপজেলায় যাতায়াতের একমাত্র এই সড়কটি এখন ওই অঞ্চলের মানুষের আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কাঠ আর স্টিলের পাটাতন জোড়াতালি দেয়া এসব ব্রিজের উপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে যাত্রীদের। অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনা এড়াতে নড়বড়ে ব্রিজগুলো জরুরি ভিত্তিতে নতুন করে নির্মাণ করার তাগিদ দিয়ে বান্দরবান জেলা প্রশাসক গত বছরের ১ নভেম্বর সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন। একই বিষয় নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উ শৈ সিং-ও মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন। কিন্তু কোন আবেদনেই এখনও সাড়া মিলেনি।

জানা গেছে, চিঠি দেয়ার তিনমাসের মাথায় গত ২ ফেব্রæয়ারি বান্দরবান-রুমা সড়কের মুরুংগোবাজার এলাকায় বেইলি সেতু পার হতে গিয়ে ব্রিজ ভেঙ্গে মালবাহী একটি ট্রাক গভীর খাদে পড়ে যায়। ঘটনাস্থলে সেদিন মারা যান ট্রাক চালক। দুর্ঘটনার কারণে ওই সময় বান্দরবানের সাথে রুমার সড়ক যোগাযোগ পাঁচদিন বন্ধ ছিল।

১৯১৭ সালে রাঙামাটি জেলা ও বান্দরবান মহকুমার অধীনে বর্তমান রুমা উপজেলা থানা হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে। ১৯৮৩ সালে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের ফলে উপজেলায় রূপান্তরিত হয় রুমা। সড়কপথে বান্দরবান থেকে রুমার দূরত্ব ৪৩ কিলোমিটার। ৪০ বছর আগে সড়কের ছোট বড় পাহাড়ি ঝিরির উপর এসব বেইলি ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছিল। কাঠ আর স্টিল জোড়াতালি দিয়ে চলছে এসব ব্রিজ। ঝুঁকিপূর্ণ এসব বেইলি ব্রিজ দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করছে হাজারো পর্যটক। চলাচল করছে ওই অঞ্চলে উৎপাদিত পণ্য পরিবহনের যানবাহন।

পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উ শৈ সিং জানান, বান্দরবানের বিভিন্ন উপজেলায় অভ্যন্তরীণ সড়কে নির্মিত বেইলি ব্রিজগুলো দীর্ঘদিন আগে নির্মিত। বয়সের ভারে ব্রিজগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বান্দরবান-রুমা সড়কেই রয়েছে ৪৩টি ঝুঁকিপূর্ণ বেইলি ব্রিজ। ব্রিজগুলো জরুরি ভিত্তিতে নতুন করে নির্মিত করতে সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন।

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বান্দরবান জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি বেইলি ব্রিজগুলো পরিবর্তনের কথা জানিয়ে ২০২১ সালের ১ নভেম্বর একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি পার্বত্যজেলা বান্দরবান সাতটি উপজেলার সমন্বয়ে গঠিত। সারাবছর দেশি বিদেশি পর্যটক আসা যাওয়া করে বান্দরবানে।

রুমা উপজেলায় রয়েছে বেশ কিছু পর্যটন স্পট। এরমধ্যে অন্যতম হলো-তাজিংডং, কেওক্রাডং, বগালেক, নীলগিরি, নীল দিগন্ত, রিঝুক ঝর্ণা, চিম্বুক, নাফাখুম, অমিয়াখুম, ডিম পাহাড় ও বড় পাথর। এসব পর্যটন এলাকায় যাতায়াতের পথে অনেকগুলো বেইলি ব্রিজ রয়েছে। এরমধ্যে রুমা সদর থেকে চিম্বুক সড়কের ওয়াইজংশন সংযোগ সড়ক পর্যন্ত ৪৩টি বেইলি ব্রিজ রয়েছে। এরমধ্যে ৩৭টি ব্রিজ ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে অনেক আগে। বাকি ছয়টিও ঝুঁকিপূর্ণ।
বান্দরবান সদর থেকে ৮৫ কিলোমিটার দূরে থানচি উপজেলার থানচি সদর-বলিপাড়া সড়কে পাঁচটি বেইলি ব্রিজ রয়েছে। এরমধ্যে দিংতে পাড়া সংলগ্ন একটি বেইলি ব্রিজ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।

এছাড়া বান্দরবান-থানচি সড়কে অন্য বেইলি ব্রিজগুলোও বেশ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। রুমা ও থানচি উপজেলার ঝুঁকিপূর্ণ এসব বেইলি ব্রিজের কারণে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনা। দুটি উপজেলার সাথে সড়ক পথের একমাত্র আলোচ্য যোগাযোগ ব্যবস্থা ছাড়া বিকল্প কোন পথ না থাকায় একটি বেইলি ব্রিজ ক্ষতিগ্রস্ত হলে কিংবা ভেঙ্গে পড়লে বান্দরবানের সাথে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

চিঠিতে বলা হয়েছে, রুমা সদর থেকে বান্দরবান সদরমুখী সড়কটির ওয়াইজংশন পর্যন্ত ৪৩টি বেইলি ব্রিজের মধ্যে ৫,২১,২২,২৭,২৮ ও ২৯ নম্বর বেইলি ব্রিজ মোটামুটি ভাল আছে। বাকি ৩৭টি ব্রিজ জরুরি ভিত্তিতে সম্পূর্ণ বদলাতে হবে। নয়তো যে কোন মূহুর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশংকা রয়েছে।

পাঠকের মতামত: